সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

Kaaler sondi

  কালের সন্ধি Biddamay Sarkar অজপাড়া গায়ের এক কলেজে এইচ এস সি পরীক্ষা চুকিয়েছি অনিরুদ্ধ নন্দি।শ্যামনগর মহাবিদ্যালয়" কলেজের নাম।  নিতান্তই অজপাড়া বলা চলে না। এতে নগরায়নের পদযাত্রা শুরু হয়েছে মাত্র। অনিরুদ্ধ এই কলেজের নামজাদা ছাত্রই ছিলো বটে। কবিতা লিখতে ও আবৃত্তিতে অনিরুদ্ধ কলেজে অদ্বিতীয়।  তার আরেকটা মস্ত গুন ছিলো, সেটাও কোনো দিক থেকে কম নয়। তা হলো ; গুছিয়ে যুক্তি তর্ক করা। অল্পদিনেই তার খ্যাতি কলেজের গন্ডি পেরিয়ে গেছে । বাজারে, খালের পাড়ের বাড়িগুলোতে অনিরুদ্ধের কথাই আলোচনা হয়। শান্ত স্বভাবের জন্য তাকে ভালোবাসতো সবাই। অনেকেই অনিরুদ্ধের কাছে আসে ছেলেকে পড়ানোর জন্য। কিন্তু সে পড়াতে রাজি হয়নি। তার পড়াশোনার পরে বাকি সময়টা সাহিত্য চর্চা করে কাটিয়ে দেয়। এভাবে বেশকিছু দিন কেটে যায়। প্রমিলা নামের এক মেয়ে পড়তো একই কলেজে।  অনিরুদ্ধ মেয়েটির প্রেমে পড়ে যায়। সত্যি বলতে, কোনো মেয়ের প্রতি এই প্রথম তার মনে প্রেম জেগে উঠেছে। কিন্তু মুখ ফুঠে এখনো কিছুই বলা হয় নি।  দুটি মন যে অত কাছাকাছি আসতে চায়, এত আকর্ষণ করে, দুর্দমনীয় আকর্ষণ। গতকাল পরযন্ত ও তার বোধগম্য ছিলো না। যে অনি পড়া...

হাসনের স্মৃতিধর

 

হাসনের স্মৃতিধর
বিদ্যাময় সরকার
ছোটবেলায় পাড়াগাঁয়েও প্রায় সব মানুষের মুখেই হাসন রাজার গান শুনতাম। বাবা মাঝে মাঝেই গাইতো " বাউলা কে বানাইলো রে.... হাসন রাজারে বাউলা কে বানাইলো "  লোকে বলে ও বলেরে ঘরবাড়ি ভালা নাই আমার ।
দাদা গাইতো ; " মাটির ও পিঞ্জিরার মাঝে বন্দি হইয়া রে, কান্দে হাসন রাজার মন ময়নায় রে....."
তন্মধ্যে বেশ প্রচলিত ছিল ;"লোকে বলে ও বলে রে "
এই গানটা। কারো কারো মুখে হাসনের যশকীর্তি শুনতাম। উড়ো উড়ো শুনেছিলাম উনি নাকি যৌবনে বেশ সৌখিন আর রূপবান ছিলো। চরিত্রটা ও বুঝি কলুষিত ছিলো। তখন এসব ভালো বুঝতাম না। এখন ভাবি, রাজার শিল্পের প্রতি ঝোঁক থাকলেও মনটা শৈল্পিক গুনে গড়া ছিলো না।
প্রথম জীবনে রাজা বখাটে ছিলো ঠিক। পরে শোধরে গিয়েছিল। একবারে সাধক হয়ে গিয়েছিল।
অনেকে বলে ;একবার ঘূর্ণিঝড়ে অনেক পশুপাখি আর মানুষ মারা যায়। এই করুন পরিস্থিতি হাসনের মনে দাগ কাটে। ফলে, মনের গতিপথ অন্যদিকে মোড় নেয়।
আবার অনেকে বলে ; বর্ষা হলেই হাসন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে বজরায় চড়ে বেরিয়ে পড়তো। নর্তকীদের নৃত্য সমান তালে সরাব পান। 
সঙ্গীত সাধনাও চলতো। ওটাই ছিলো আসল। আসলেই রাজা সংঙ্গীতানুরাগি ছিলো। তার আরেকটা মস্ত গুন ছিলো ; নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতো, তাদের নৌকায় যুবতী মেয়ে থাকতো। জোর করে তুলে আনতো হাসনের লোক। একদিন হাসনের মা যুবতীর বেশে বোরকা পড়ে  নৌকায় চড়ে যাচ্ছিলো। যাওয়াটা মূলত হাসনের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য।
হাসনের লোক বোরকা পড়া যুবতীকে তুলে আনলো। বোরকা তুলতে হাসনতো দাত-কপাটি লাগার জোগাড়।
এরপর থেকে হাসন রাজা এরম বদমাইশি ছেড়ে দেয়।
সবটুকুই লোকমুখে শোনেছিলাম।  এর সত্যতার পাল্লা কতটা ভারী। সেসব পরখ করার ক্ষমতা ছিলো না।
হাসনের লেখা গুলো তখন যেমন কদর ছিলো তা এখনো অটুট রয়েছে।
ধান কাটতে, মাছ ধরতে, মাঠে-ঘাঠে সবখানে মানুষের মুখে মুখে ফিরতো গানগুলো।
নিতান্ত দরিদ্র ঘরের ছেলে হিসাবে বইয়ের সাথে যোগাযোগ থাকাটাকে নিজের সৌভাগ্য মনে করি। নয়তো হাসন বা তার মতো মনীষীদের গুরুত্ব কখনোই বুঝতে পারতাম না।
কলেজে পড়ি তখন বাউলগান ও বাউলদের জীবন নিয়ে জানার এক তীব্র আকাঙ্খা জন্ম নেয় মনে। হাসন রাজার গান যতরকম সোর্স থেকে সম্ভব সংগ্রহ করে শুনতাম। গানের মাধুর্য উপভোগ করতাম সাথে অর্থের গভীরতা বোঝার চেষ্টা করতাম।
সেইসময় কাব্যি রোগটাও ঝেকে বসেছে মাথায়। লেখালেখি করতাম আর স্বপ্ন দেখতাম আমার লেখা পত্রিকায় বেরিয়েছে। আর আমি বন্ধুদের উছ্বাশিত হয়ে তাই দেখাচ্ছি।
কলেজের ছুটিতে সেবার বাড়িতে এসেছিলাম। মনে ভাবলাম সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করে গঞ্জে যাই না কেনো লেখাগুলো নিয়ে৷ যদি কোনো সুবিধা করতে পারি। যেমন ভাবনা তেমন কাজ।
রওনা হলেম গঞ্জের উদ্দেশ্য। গাড়ি থেকে হঠাৎ একজায়গায় চোখ আটকে গেলো। ফটকের সেখানটায় লেখা " হাসন রাজার মিউজিয়াম "।

তৎক্ষনাৎ ঠিক করে ফেললাম ; কাজ শেষ করে মিউজিয়ামটা ঘুরে আসতেই হবে
সন্ধ্যার কিছু আগে মনখারাপ করে বেরিয়ে আসলাম পত্রিকা অফিস থেকে৩ঘন্টা টায় বসে থাকার পর জানতে পারলামসম্পাদক নাকি একটা জরুরি মিটিংয়ে আটকে গেছেফিরতে রাত ন'টা বাজতে পারেআমি যে মেনুস্ক্রিপ্ট নিয়ে গেছিলাম তার উপর আমার নাম্বার লিখে জমা করে দিলাম
যাইহোক, লেখা প্রকাশ করতে পারলাম না তো কি হয়েছেপত্রিকা কিভাবে বানায় তাতো দেখে এলাম এটাই বা কম কিসে। এ জিনিস এর আগে কখনো দেখি নাই
রাস্তায় বেরিয়ে একটা রিকশা নিলামরিকশার চালক আধবয়সী, পান খায়, কম কথা বলেনাম মনসূর আলী

উনারে জিনিস করলাম মিউজিয়াম কতদূরে?ভাড়া কত? মনসূর ভাঙা গলায় জবাব দিলো - বেশি দূরে নেই, সুরমার পাড়েওখানে যেতে ভাড়া ২০ টাকা লাগেরিকশায় উঠে বললাম - আচ্ছা চলোরিকশায় উঠে গা এলিয়ে দিয়ে যেন স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে অবসন্ন হয়ে পড়লামএই সুরমা নদীর মমতায় কবি দিলওয়ার বড় হয়েছেন।  তার প্রতিদানে গুন কীর্তন করে গেছেন সুরমারতারপরকোথায় যেন কম হয়ে যায়রিকশা সুরমার একপাশে একটা গলি ধরে চলছেগলিটা একেবেকে অনেক দূরে চলে গেছেএই শীতের সন্ধ্যায় নদীর পাড়ের ইলেকট্রিক বাতিগুলো জ্বলে উঠেছেনদীর ঠান্ডা হওয়া এসে গায়ে শুরশুরি দিচ্ছেসরু গলি পেরিয়ে মন্দিরের ঘন্টার আওয়াজ আছসে
এমব অনূভুতি কেবল বাংলার জমিনেই পাওয়া যায়
সামান্য একটু ফাঁকা জায়গায় রিকশা থামলোলোহার জীর্ণ একখানা ফটক, ফটক থেকে আধভাঙ্গা পাকা রাস্তা গিয়ে ঠেকছে মিউজিয়াম অবধি
মিউজিয়ামের পাশে একটা টিনের ঘর ছিলো লম্বালম্বিভাবেবাকি জায়গায় সবুজ দূর্বায় ঢাকাএকটা মহিলা ঐখানে খড়কুটো দিয়ে আগুন করছে
এইটুক বোঝা যায় মিউজিয়ামটি অবস্থাপন্ন নাঅবস্থাপন্ন না যদিও এটাকে মিউজিয়ামের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা বিবেচনার কাজ হবে নাযুগ-যুগান্তরে এই মিউজিয়ামঅন্যগুলোর মতোই গুনীজনের স্মৃতিধারক হবে, কালের সাক্ষী হয়ে রবেশতযুগ পূর্বের সমাজেও মানুষ বিচরণ, পর্যবেক্ষণউপলব্ধি করতে পারবে
টিকিট কিনে মিউজিয়ামে প্রবেশ করলামশোকেসে হাসনরাজারতার পরিবারবর্গের ফটোবিভিন্ন দলিলকয়েক সারিতে শোকেস রয়েছেতারই এক সারিতে হাসনের ব্যবহৃত জিনিস পত্র
যেগুলো আমারে খুব আকৃষ্ট করেছিলোযেমন - পিতলের হুকোহাসনের ঝাঁঝরওয়ালা পোশাক, ঘি খাওয়ার পাত্র, গানের বাদ্যযন্ত্র, মাথার পাগড়ি, পায়ের খড়ম ইত্যাদিবেশ কিছু ফটো তুলেছিলাম  মিউজিয়ামের ভিতরেবাহিরে।  কীভাবে জানি ফটোগুলো ডিলিট হয়ে গিয়েছিল। এ নিয়ে খুব অনুশোচনা হয়েছিলোযাঃ বন্ধুদের দেখাতে পারলাম না
যাইহোক, সেদিন বুঝেছিলাম যেকোনো শিল্পের প্রধান রক্ষক হচ্ছে মিউজিয়াম বা জাদুঘর

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রক্তে লেখা বর্ণ

  রক্তে লেখা বর্ণ বিদ্যাময় সরকার মুখে বলা বুলির মতোই, অন্যায় অত্যাচার সহ্য করেছি কতই লড়েছে বাঙালি জীবন রেখে বাজি রক্তে লেখেছে বর্ণ ষড়যন্ত্র আর অবিচারে বর্ণ হয়ে গেছে অশুচি তাইতো তাজা রক্ত দিয়ে, বর্ণ শুদ্ধিতে বারবার ধুয়েছি শূন্যে ভাসমান বর্ণ নিয়েছি হাতে ক্ষত -বিক্ষত দেহ শত্রুর আঘাতে তবুও লড়েছে বাঙালি জীবন রেখে বাজি রক্তে লিখেছে বর্ণ বাংলা থেকে সোনার খনি গেছে উড়ে ঘাতকের থাবায় সুদূর গগন পাজরে এহেন, খাঁটি সোনা কোনো মূল্যে যায় না কেনা এদেশের হৃদয় থেকে পাওয়া লড়েছে বাঙালি জীবন রেখে বাজি রক্তে লিখেছে বর্ণ অত্যাচারীর দম্ভ করে চূর্ণ মাতৃভূমির আশা করেছি পূর্ণ লড়েছে বাঙালি জীবন রেখে বাজি রক্তে লিখেছে বর্ণ বাংলার নদীপথ বেয়ে,  পাহাড়ি জমি পেরিয়ে তারা আসবে আবারো যদিগো মর্যাদা হারায় রক্তে লেখা বর্ণ।

বাউল গানের আসর

বাউল   সোনার দেশে বাউলের বেশে বিদ্যাময় সরকার   বাউল গান টেনে আনে আমারে, ঘরের বাহিরে  ঠিক তক্ষুনি, সমগ্র পৃথিবীর -সমগ্র সুর তুচ্ছ করে মন চলে গানের আসরে।  বটছায়ায় কত মায়ায়, বাজায় বাশি রাখাল মোরলিক বাঁশির সুরে, হৃদয় জুড়ে দেয়রে সোনার ঝিলিক। চৈত্রের ভ্যাপসা গন্ধ আকাশ ছুয়ে যায়, একতারার  টানে নদী বয়ে যায় নীরবে  নদী ছলছল চোখে দেখে, বাউল একতারা বাজায়  মধুর ঝঙ্কারে।  গানের মোহনায় দিগন্তের সমীরণ হারিয়েছে দিশা গোবর কড়ানি বুড়ির ক্ষনেকে মিঠে তৃষ্ণা। 

গল্পের আসর। দাদি নাতি-নাতনীদের গল্প শুনচ্ছে।

গল্পের আসর   গল্প বলা  বিদ্যাময় সরকার  নিরব সাঝের ডাকে - মনে শঙ্কা জাগে  তারই অবকাশে মনে আনন্দের ও ডঙ্কা বাজে। সারাদিন ঝরেছিল ঝমঝম বাদল ধারা আজি গল্প শুনতে মন হয়েছে পাগল-পাড়া  দাদি কে ডাক পাড়ি- একটা গল্প বলো না বুড়ি।  ভালোই জমবে জুটলে থালাভরা চানাচুর-মুড়ি।  ঘরের এক কোণে খাটে বসে পান চিবায়ে দাদি বলে  শোনো, পড়া নিলো কিসে  বলি মোরা ; পড়া নিলো রসে- বুড়ি মরে বিষে বুড়ি শুরু করে ; একদিন এক চাষি  মোদের দাবি, এটা শুনেছি।  বুড়ি ফের অন্য আরেকটা শুরু করে অন্যভাব নিয়ে।